অন্য সবকিছুর মতোই সাহিত্যেরও শত্রু আছে, যেমন রয়েছে মিত্র। মিত্রের কথাটাই প্রথমে ধরা যাক। এক কথায় বলতে গেলে সাহিত্যের প্রধান মিত্র হচ্ছে মানুষের মনুষ্যত্ব। সকল শিল্পকলার ব্যাপারেই অবশ্য ঘটনাটি ওই একই; মানুষই শিল্পকলা সৃষ্টি করে, মনুষ্যত্বের তাগিদে এবং নিজের প্রয়োজনে। সাহিত্যও মানুষেরই সৃষ্টি, মানুষের প্রয়োজনে। এবং মানুষের ভেতরকার তাগিদে। শিল্পকলার প্রধান মিত্র মানুষের ওই মানুষ্যত্বই, […]
সিনেমা অথবা নাটকের বিষয় উপাদান, নির্মাণশৈলী এবং প্রাসঙ্গিকতার উৎকর্ষ বিচার কিংবা নতুন কতটা নতুন, এ-ধরনের তুল্যমূল্য নির্ধারণ বিষয়টি ভাবতে সহজ। কিন্তু বিচারিক মূল্য জুড়ে দেওয়া মোটেও সহজ নয়। কারণ প্রতিটি শিল্পই প্রকাশের উপমায় স্বতন্ত্র। যা কিছু স্বতন্ত্র, সেটাই নতুন। কতটা নতুন যোগমাত্রার লেভেল দেওয়া কঠিন। তবে সার্বিক বিচারে সিনেমা অথবা নাটকের সংস্কৃতিমূল্য আছে কি না, […]
পাঠকদের রুচি-নির্মাণ ও মননচর্চায় কালি ও কলম পত্রিকার ভূমিকা
বাংলাদেশের সাহিত্য পত্রিকা নিয়ে, বিশেষ করে গত সত্তর বা পঁচাত্তর বছরে আমাদের দেশে যে উল্লেখযোগ্য পত্রিকাগুলি বেরিয়েছে, তা নিয়ে খুব ভালো গবেষণামূলক কাজ আমার চোখে পড়েনি। কিছু প্রবন্ধ লেখা হয়েছে, কিন্তু আমাদের মননের জগৎ যেহেতু খুব দুর্বল তাই এসব বিষয় নিয়ে স্থায়ী মূল্য বহন করে এমন কাজ করার মানুষেরও খুব অভাব। আমাদের রাজনীতি, কৃষ্টি বা […]
বাসররাতে নবপরিণীতাকে গান গাইতে বলার ‘স্পর্ধা’ জীবনানন্দের মতো একজন আপাতনিরীহ স্বামীর পক্ষে কী করে সম্ভব হলো, সে এক বিস্ময়। কিন্তু তিনি সত্যিই বাসররাতে স্ত্রীকে দিয়ে গান গাইয়েছেন। তাও যেনতেন গান নয়, রবীন্দ্রনাথের ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে’। স্ত্রী লাবণ্য দাশের বয়ানে জানা যাচ্ছে : ফুলশয্যার রাতে স্বামীর সঙ্গে তাঁর ‘আইসব্রেকিং’ হয়েছিল এভাবে : – আমি শুনেছি […]
চুল কাটা শেষ হলে নাপিত যখন মাথার পেছনে ও দুই পাশে আয়না ধরেছিল, তখন একত্রিশ বছর বয়সী নওশাদ হাফিজের চিন্তায় একটা খটকা ধাক্কা দেয়, ‘অন্যরকম লাগছে। খুলির শেইপ কি বদলে যাচ্ছে?’ পেছনের দেয়ালে ঝোলানো মেসির ড্রিবলিং, সামনের আয়নায় মাথার সঙ্গে ফুটবল এবং কয়েকটা লাল হলুদ বুট পরা পা মাথার পাশে, দেখা গেলেও নাপিতকে নওশাদ আরো […]
আধুনিকায়ন আর বিশ্বায়নের প্রাপ্তি, নাকি খেসারত : বাঙালির নদী আর গানের সহমরণ
আজন্ম ঢাকা শহরে বেড়ে ওঠা এই আমি শহুরে জনপদের বাইরে নদী-প্রকৃতিকে জানবার চেষ্টা করেছি বইয়ের পাতায়, গানের বাণী আর সুরে। কিন্তু মানসচক্ষুতে তার উপলব্ধি গড়ে ওঠার পাশাপাশি চর্মচক্ষুতে দেখবার সুযোগ না ঘটলে ‘দেখা’ দর্শন হয়ে ওঠে না। স্কুলে যাওয়ারও বহু আগে কবে যে প্রথম ‘পদ্মার ঢেউ রে’ গানটি কিংবদন্তি শিল্পী ফেরদৌসী রহমানের কণ্ঠে শুনেছিলাম মনে […]
নানারা তিন ভাই। আবার তাঁরা চার ভাইও। কারণ, নানার বাবা শেখ আবদুল জব্বার একজন বালককে পুত্র হিসেবে পালন করতেন। আর তা এতই নিবিড় ছিল যে, সবাই জানত তাঁরা চার ভাই। এমনকি আমার নানা বাড়ি বানানোর সময় বড় ভাইকে নিয়ে একসঙ্গে বাড়ি তৈরি করেন। অর্থাৎ বাড়ি একটাই। শুধু দুজনের অবস্থান দুদিকে। পুবে বড় ভাই, পশ্চিমে মেজো। […]
শূন্য হাতে রাজসিক প্রত্যাবর্তন
না-চেয়েই কোনোকিছু যে-তোমার ডানপাশে সারাপথ ছায়া হয়ে হাঁটে ভালোবাসার হিজাব-আবৃত্ত হয়ে মনে রেখো তারে। না-পেয়েই কোনোকিছু যে-তোমার ভুলটাকে ফুল বলে লড়ে সব ঘাটে প্রেমের আলখেল্লা পরে একজীবন খুঁজিয়ো তাহারে। না-ছুঁয়েই কোনোকিছু যে-তোমার দুঃখরাতে হাত ধরে নিয়ে যায় চাঁদোয়াসড়কে বিরহের হাঁস হয়ে পাড়ি দিয়ো লক্ষ মাইল তাহারই অন্তরে। শূন্য হাতে রাজসিক প্রত্যাবর্তন চিরদিন প্রেমেই মানায়।
আমি ফিলিস্তিনের পাশে আছি। ফিলিস্তিনের মাঠে যেসব ঘাস যেসব শিশুর খেলা আর স্কুলের পড়াশুনা আমি তার পাশে আছি। আমি সেই জানালাটার পাশে আছি যে জানালায় কবিতা লেখা হয় আকাশ দেখা হয় আর জোছনা এসে পড়ে ঝরে। আমি সেই হাটবাজারের পক্ষে আছি যেখানে মানুষের উত্তাপে উত্তাপে ওঠে জমে। মানুষ আনন্দমুখর হয় কোলাহল করে। আমি কোনো নির্জনতার […]
ব্রহ্মপুত্রের একান্ত নিজের এক গান আছে তার বিশাল বিশাল চর, চরের কাশবন সরিষার হলদে বান, জলের ভয়াল পাঁকের যে স্বরলিপি, যে সুর তা আর কারো নেই তার কাছে এলে আর কোনো গান শোনা যায় না মোসার্ত, ম্যারাডোনা কী মাইকেল থেকে জ্যানেট জ্যাকসন, সাকিরা কী ডায়নার দেহ ও প্রেমের গান, গল্প এখানে কোনো সুর খুঁজে পায় […]
তোমার পদধ্বনির ভারে টলে গেল ব্রহ্মাণ্ডের নীরবতা সশব্দ বাজলো বুকে মৃত্তিকার প্রবল আর্তনাদের গান মাটি চিরে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে যাচ্ছে অনর্থ প্রলাপ কোথায় লুকানো হৃৎপিণ্ড সেইখানে চোরাছন্দে বেজে বেজে অর্থ পাবে বলে …
দুঃখভারাবনতা মাকে বহুদিন দেখেছি একা একা ঘরের ভিতর মুখ নত, বিশীর্ণ দু-গালে বহমান উচ্ছ্রিত নোনাধারা – সেই নীরব নত অশ্রুপাতে আমাদের ছোটঘরে কথাহীন জড়ো হতো পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের পাথর বিমূঢ় প্রশ্ন করি শিশু কৌতূহলে, ‘কী হইছে মা?’ ‘বুঝবি না তুই, বাবা’, বলতে বলতে আঁচলে চোখ মুছে মা সরে যেতেন অন্যদিকে … আমার প্রাত্যহিক […]
আমি এই পথে আরো কিছুদিন হেঁটে যাবো
আমি এই পথে আরো কিছুদিন হেঁটে যাবো আরো কিছুদিন নীল বাসনায় স্বপ্নের দোল খাবো সাদা হাঁস আর মেঘ-বালিকারা পথে ছুটে এসে দাঁড়াবেই ধান-বনগুলো বুক চিরে তার সোনা মনখানা বাড়াবেই নদী ছিঁড়ে দেবে চিতলের পেট দোয়েলের শিস অফুরান ভেট ঘন শালবন দেবে উপহার মউ-মন গাঁথা ফুল-মালা হার লাল রং মেখে গোলাপের ঠোঁট ঠোঁটে চুম্বন পরাবেই মৌমাছি […]
সন্ধ্যাপ্রদীপ দেখতাম তুলসী পাতার ঘ্রাণে হেঁটে আসতো নিভু নিভু মনমরা মন, আগুনরাঙা সময়ের কাছে পরাজিত নই; অধরে নধরে হাসির কাছে সভ্যতা ম্লান, জলযৌবনে গানের সিম্ফনি শুনে; খেয়াঘাটের কালসিটে দাগগুলো জাগত, পাপড়ি খুলে ফেলত কামনার পাতা, মাঝির বৈঠা শক্তপোক্ত হয়ে যেত নিমিষেই, নদী আর রাত পার হয় একইসাথে একই অঙ্গে ॥
তোমার বাড়ি গিয়েছিলাম আজ। দরজায় দেখি বিশাল তালা। অদ্ভুত লাগল। তালা নতুন কেন? তোমরা বাড়ি ছেড়েছ আজ নয় মাস। তাহলে? কেউ তো ও বাড়িতে যায় না। তবে? কে আসে? কে যায়? তালা খোলে? ভেতরে ঢোকে? তুমি কি আসো? চুপি-চুপি? আকাশটা আজ আবার মেঘলা। তোমার যাওয়ার দিনের মতো। তুমি মেঘমাখা আকাশমুখে বলেছিলে, ‘যাচ্ছি।’ আমি বললাম, ‘যাচ্ছি […]
আমাদের প্রিয়জন সীমানা ছাড়িয়ে ওপারে পাখি হয়ে উড়ে যায় আমরা জনপদে নদী, ডোবা, জল শুকিয়ে দিই দুই হাতে, ওরা যেন আর না ফেরে পরিযায়ী প্রাণ পুরাণে এই দেশ; ব-দ্বীপ জলের আকর ছিল নদীময় ভালোবাসা শ্যামল প্রহর জলই তো আদি সত্য তৃষ্ণার জল, স্নানের শুশ্রূষা সবশেষ পাখি এক অ্যালব্যাট্রস খুনের রক্তে শুকিয়ে কাঠ জলদ কণ্ঠস্বর জনপদে […]
বহুদিন আগে কোনো পড়ন্ত বিকেলে দেখেছি যাকে – শান্ত সবুজের পাশে – সে তো নদীর পরিমিত উচ্ছ্বাসে এসে, কয়েকটি কথা বলে – চলে গিয়েছিল দূরে আরো – দূরে – সরু পথ ধরে – তার ছোট ঘরটিতে, সেখানে সে বহুদিন ধরে ছিল শান্তিতে; আসলেই কি নিবিড় নির্ঝঞ্ঝাট ছিল তার দিনগুলো? […]
মতিন গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত তিনবার নিজেকে প্লাটিপাস দাবি করেছে। আমি পাত্তা দিইনি। দুইবার মোবাইল রেখে দিয়েছি; শেষবার বলার পর থেকে আমি মোবাইল অফ করে রেখেছি। গত রাত থেকে শুরু। এখন পরের দিন দুপুর ২টা। আমি ড. ফিরোজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম। তাঁকে সন্ধ্যার আগে পাওয়া যাবে না; চেম্বার থেকে জানাল। আমি সকালে নাশতা করেছি; […]
এক এই উত্তীর্ণ দুপুরের তেজহীন রৌদ্রে বালকটি দৌড়ে হাঁপিয়ে উঠছে। হাতে মাটির ঢেলা। ফোঁস ফোঁস আওয়াজ তুলে নিশ্বাস ছাড়ছে আর দৌড়াচ্ছে। ধবলীকে ধরতেই হবে। হাতের ঢেলা ছুড়ে আহত করতে চায় ওকে। মাঝে মাঝে নিশানা লেগেও যায়। ক্যাঁয় ক্যাঁয় করে ওঠে ধবলী। ব্যথায় দেহটা খানিকটা বেঁকেও যায়। মুখ থেকে ছিটকে পড়ে বালকের আকাঙ্ক্ষিত বেলশুঁঠ। এই অদ্ভুত […]
আয়তন। এই কথাটিকে এতরকমভাবে কাজে লাগিয়েছে বাঙালি যে, ভেবে কূল পাই না। বাংলা একাডেমির বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধানের প্রথম খণ্ড (ঢাকা, জ্যৈষ্ঠ ১৪২০) খুললাম। দেখি, সাত-সাতটি অর্থ আছে। প্রথমত, বিস্তার। দ্বিতীয়ত, দেবালয়। তৃতীয়ত, ক্ষেত্রমান, যে অর্থে অংক কিংবা পদার্থবিজ্ঞানের বইয়ে আয়তনের ছড়াছড়ি। চতুর্থত, ঘনফল। পঞ্চমত, পরিসর। ষষ্ঠত, আকার, যে-অর্থের সঙ্গে হামেশাই মিশে যায় আয়তন। সপ্তমত, মাপ। […]
লামা কোয়ান্টামে দিন শুরু হয়েছে সেই কাকভোরে। হিরণ্ময় মৌনতায় লীন হওয়ার এই প্রচেষ্টার প্রটোকল হচ্ছে – প্রশিক্ষণার্থীদের জবান থাকবে সম্পূর্ণ বন্ধ। এই ধ্যান-সাফারিতে এসে খানিকটা মুশকিলেই পড়েছি বোধ হয়। কী করে যে একদম মৌন থাকি? শিথিলায়ন শুরু হলেই আবার তন্দ্রা তন্দ্রা ভাবও হয়। বিরতির সময় চুমুক চুমুক চা পান করেও ঘুম ভাব তাড়াতে পারি না। […]
‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর পর্দা নেমেছে গত ২রা মার্চ। প্রতিবছর সাধারণত ফেব্রুয়ারির শেষদিন সমাপ্ত হয় বইমেলা। এ-বছর শেষ হলো দুদিন পর। তাছাড়া এ-বছরের ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিন হওয়ায় অতিরিক্ত তিনদিন পাওয়া গেছে। করোনার কারণে ২০২১ সালের বইমেলা হয়েছিল ১৮ই মার্চ থেকে ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত। এবার ১লা ও ২রা মার্চ সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে প্রকাশকদের দাবির […]
Being a woman in a patriarchal society does not imply being powerless. (Fredrik Engelstad, qtd. in Kajal Bandyopadhyay’s Female Power and Some Ibsen Plays, p. 59) ‘…বেশিরভাগ উচ্চাভিলাষী দিবাস্বপ্নের কোথাও না কোথাও আমরা কোনো এক নারীকে দেখতে পাবো। … পুরুষটি ওই নারীর জন্যই তাঁর সমস্ত নায়কোচিত কর্ম সম্পাদন করে থাকেন। ওই নারীর পায়েই নিবেদন করেন […]