নাজমুন নাহার কেয়া একজন দৃশ্যশিল্পী – যিনি স্মৃতি, পরিচয় ও অন্তর্গত বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করেন। মনবুকাগাকুশো স্কলার হিসেবে টোকিওতে কাটানো পাঁচ বছর তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিকে গভীরভাবে প্রভাবিত
এক বসবার ঘর। আয়তনে চল্লিশ বাই পঞ্চাশ ফিট। বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার দরোজা এখন বন্ধ। নীল পর্দা ঝুলছে। বসবার ঘর থেকে ভেতরে যাওয়ার দরজা দেখা যাচ্ছে, সেখানেও নীল পর্দা। দরজাটা ভেজানো। ঘরের ডানদিক
শনিবারের দুপুরটা ভারী পাথরের মতো বুকে চেপে বসে থাকে। শুক্র, শনি ছুটি বলে এই দুটি দিন আনন্দে ভরে ওঠার কথা, অথচ তা হয় না। পায়েল ব্যস্ত হয়ে থাকে প্রণীলকে নিয়ে। প্রদীপ আর পায়েলের একমাত্র সন
ত্রিভঙ্গ মুরারি খাঁজকাটা কণ্টকময় বৃক্ষ। একখান দুইখান না, সার সার। সুখে-দুঃখে তারা একাট্টা। জাহালমের খাজুর বাগান। ভদ্দরখোলের ছাওয়াল-পাওয়াল বুড়া-জোয়ান কেডা না চেনে। উত্তরা বাতাসের আগ
শেষমেশ আলী আক্কাস যখন ঠিক করে ফেলল কপালে যা আছে, বাড়ির ভিটি বেচে হলেও একটা ব্যাটারি রিকশা কিনে ফেলবে, বউ রমিজা আল্লা গো, এইডা কী কও বলে আঁতকে উঠলেও সে শোনার গরজ দেখাল না। চিন্তাটা এক-দুদিনের ন
এক অনন্ত অনুতাপের ভার বহন করছিলাম আমি। পুকুর ঘাট থেকে কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলে যে সিমেন্টের বেঞ্চি, তাতে বসে আছি আমরা দুজন। আমি আর আমার ছেলে। আমার গা ঘেঁষে বসেছে খোকন, আমার একটি আঙু
তেজি কোনো রকম ভনিতা ছাড়া বলে বসে, প্রেমারিন মানে কি তুমি জানো তনু! তনু ক্যামেরার লেন্স ঠিক করতে করতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, বলে, সকাল থেকে আমাদের কোনো কথা হয়নি, তাই না! – হুম, তাতে কী! কত সক
আজকাল গল্প নিয়ে কেউ ভাবে নাকি? গল্প তো গল্পই। এ নিয়ে অত ভাবনা-চিন্তার কী রয়েছে? বায়বীয়, ফাঁকা, মূল্যহীন যে-বস্তু, তাকে পাত্তা দেয় কেউ? আসলে গল্পের ভাগ্যে সব কালে অবহেলাই লেখা থাকে। কেউ কে
তখনো ভোরের আজান হয়নি। রাত-রাত ভাবটা রয়েই গেছে। বাড়ির পেছনে সরকারবাড়ির বাঁশঝাড়ে অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির। শালিক, ময়না, দোয়েল, চড়ুই পাখিই বেশি। কাকের কা-কা শব্দও আছে। এইসব পাখির ডাকাড
নাম সুখমন। জাতীয় পরিচয়পত্রে এমনই আছে। সেখানে একটা জন্মতারিখও লেখা আছে। তবে সেটা তার জন্মতারিখ ছিল কি না সে জানে না। এটা ভোটার তালিকা করা লোকের কৃতিত্ব। সুখমনের মায়ের বলা একটা কথা তার মন
অনেকটা দূরত্ব পেরিয়ে ক্লান্ত তিতলি, ছয়তলার নিচে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে যিশু। বিষণ্ন! যিশুকে দেখলে তিতলির বুকের ভেতর ব্যথা হয়, টনটন করে কোথাও। একবার মনে হয় ফিরে গেলেই হয়, কী হবে কাছে গিয়ে;
গুড়ুম! গুড়ুম! গুড়ুম! বন্দুকের গুলির শব্দে অপরাহ্ণের রাজবিলাস জেগে ওঠে। হরেক রকম গাছের ঝোপ থেকে ঝাঁক-ঝাঁক পাখি সরবে উড়ে যায়। সেই উড়ালে গাছের ডালপালা ঝাঁকুনি খায়। পাকা আম থুপ্থাপ্ ঝরে
শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথি। বৃক্ষায়ুর্বেদবিদ্যা পাঠ শেষে ভানুমতী পিতার জন্য ঘৃতান্নসমেত নালিতা শাকের বন্দোবস্ত করতে বসে গেল। প্রভাতের আগেই তিনি বিহার রওনা হবেন। ভানুমতীর বড় ইচ্ছা সে
আমার ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট – নামটা নাই বা বললাম, খবিশ লোকেরা তো জেনেরিক, আলাদা নামের মহিমা তাদের জন্য না – আমাকে যে সহ্য করে না, তার প্রমাণ দিলো ঢাকা থেকে হঠাৎ আমাকে বরগুনা বদলি কর
বায়েজিদ বোস্তামীর পাশের পাহাড়গুলো ঢেউ দিতে দিতে মিশে গেছে আকাশে। এদিকে মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট। চারদিকে তারের বেড়া। গেটে সেন্ট্রি। তাঁবুর পর তাঁবু সাজান – যেন অসংখ্য ব্যাঙের ছাতা ফুট
এক কাপ চা গিলতে তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা নয়। তবে শুধু এক কাপ চা নয়। কাঁটা চামচ বিঁধিয়ে আস্ত ছ’ আনার একটা চপ্ সাবাড় কোরছিলাম। ঘটনাটা অবশ্য নিছকই আকস্মিক। পকেটে যার সাড়ে তের আনা পয়সা মূল
ওরা এসেছে। হ্যাঁ নিশ্চয় ওরা। আনন্দে তোলপাড় করল বুক। কত দিন ওদের দেখিনি, আজ তিন তিনটে বছর ওরা আমার চোখের অন্তরাল। অনেক অনেকদিন পরে দেখা হবে ওদের সঙ্গে। আব্বা, আম্মা, বাচ্চু, মুন্নি – আমার ছোট
হারামজাদীকে পেলে হয় …। অন্ধকার ঠাণ্ডা-ক্যান্টিনের এক কোণে রাখা পাতলা কাঠের টেবিলটা যেন আর্তনাদ করে উঠল। চায়ের জন্যে বাড়তি চিনি রাখার সবুজ প্ল্যাস্টিকের বাটিটা উল্টে পড়ল মেঝের উপর … হ
ষাট-দশকের শুরুতে যে তরুণ স্কুলের শেষ ক্লাসের ছাত্র, দশকের শেষে সেই তরুণটিই একজন উৎসাহী গল্প-লেখক। এমন ঘটনা আজকের বাঙলাদেশে বিরল নয়। পঞ্চাশের দশকে যারা বাঙলাদেশে সবচেয়ে প্রতিভাবান গল্পক